গভীর রাতে এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে সরকার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত করে ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে প্রত্যাহার করা হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। কর্ম অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংশ্লিষ্ট ফাইল অনুমোদন করলে ডিসিকে প্রত্যাহারের আদেশ
জারি করা হবে বলে জানান ফরহাদ।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন
তিনি বলেন, “তদন্তে অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। বিভাগীয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। অহেতুক যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে… সত্যতা পেয়েছি বিধায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সুলতানা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কারের পর তিনি নিজের নামানুসারে ওই পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’ রাখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দশ মাস আগে।
এরপর বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মাদক রাখার অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ওই অভিযান পরিচালনা করেন। গভীর রাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ডিসির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দেন অনেকে।
এরপর ওই ঘটনা তদন্ত করতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. মাসুদ রানা বিষয়টি তদন্ত করেন। ওই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব; জনপ্রশাসন সচিব ও এপিডিসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা রোববার সাংবাদিক রিগানের জামিন মঞ্জুর করেছেন। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাদণ্ড দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও হয়েছে।